HOMEOPATHY BLOG 2024

HOMEOPATHY BLOG 2024

হোমিওপ্যাথির মূলনীতি- Homeopathic Fundamentals

হোমিওপ্যাথির মূলনীতি

হোমিওপ্যাথি কী?

হোমিওপ্যাথি হল এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে অতি সূক্ষ্ম মাত্রায় ওষুধ ব্যাবহার করা হয়।  হোমিওপ্যাথি ওষুধ একটি সুস্থ ব্যাক্তির মধ্যে প্রয়োগ করলে ঐ সুস্থ ব্যাক্তির মধ্যে ঐ ওষুধের লক্ষণ ফুটে ওঠে।

ডাঃ হ্যানিম্যান এবং তাঁর অবদান

ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির জনক। তিনি হোমিওপ্যাথির মৌলিক নিয়ম এবং পদ্ধতি তাঁর "অর্গানন অফ মেডিসিন"  বইতে বর্ণনা করেছেন

হোমিওপ্যাথির মূলনীতি:

হোমিওপ্যাথির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান হলো  'অফ সিমিলিয়া'

'' অফ সিমিলিয়া' (Similia Similibus Curentur):

এই নীতির মূল বক্তব্য হলো:  যা সুস্থ মানুষের মধ্যে কোনো রোগের লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে, সেই একই জিনিস রোগীর মধ্যে একই ধরনের লক্ষণ নিরাময়ে কার্যকর। সোজা ভাষায় বলা যায় - সমরূপ দ্বারা সমরূপ নিরাময়।

উদাহরণ:

পেঁয়াজ কাটার সময়  যদি কোনো ব্যক্তি চোখ ও নাক দিয়ে জল পড়ে, তাহলে হোমিওপ্যাথি নিয়ম অনুসারে সেই ব্যক্তির জন্য এমন একটি ওষুধ ব্যবহার করা হবে যা এই ধরনের লক্ষণ সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে, যেমন Allium Cepa

 

' অফ সিমপ্লেক্স (Law of Simplex):

অর্থ এবং ব্যাখ্যা: হোমিওপ্যাথিতে ল' অফ সিমপ্লেক্স হলো একটি মৌলিক নীতি । এই নীতি অনুসারে এক সময়ে রোগীর জন্য একটিমাত্র ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত। এটি রোগ নিরাময়ের প্রক্রিয়াকে সহজ এবং নির্ভুল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

মূল কথা:একই সময়ে একাধিক ওষুধ ব্যবহার করলে রোগীর লক্ষণ এবং প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য, রোগ নিরাময়ের জন্য একক ওষুধ নির্বাচন করা হয়, যা রোগীর সব লক্ষণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কারণ:একাধিক ওষুধ একসাথে ব্যবহারে প্রতিক্রিয়াগুলো গুলিয়ে যেতে পারে।একক ওষুধ ব্যবহারের ফলে চিকিৎসার ফলাফল সহজে পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন করা সম্ভব। রোগীর শরীরে প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতাকে (vital force) উদ্দীপিত করার জন্য এই পদ্ধতি কার্যকর।

উদাহরণ:

যদি কোনো রোগীর জ্বর, মাথাব্যথা এবং দুর্বলতা থাকে, তবে তার জন্য একটিমাত্র ওষুধ নির্বাচন করা হবে, যা তার সব লক্ষণের সাথে মানানসই, যেমন BryoniaAlba বা Gelsemium

' অফ মিনিমাম (Law of Minimum):

হোমিওপ্যাথির একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো ' অফ মিনিমামস্যামুয়েল হ্যানিম্যান  প্রবর্তিত মৌলিক ধারণাগুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম। এর মাধ্যমে তিনি ওষুধের ব্যবহার এবং প্রয়োগ পদ্ধতির একটি বিশেষ দিক ব্যাখ্যা করেছেন।

' অফ মিনিমামের মূল বক্তব্য:

হোমিওপ্যাথিতে রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধের খুব ক্ষুদ্রতম (minimum) মাত্রা ব্যবহার করা হয়, যা রোগীর শরীরে প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

বঙ্গানুবাদে বলা যায়:
-রোগ নিরাময়ের জন্য যতটুকু মাত্রা প্রয়োজন, ততটুকুই যথেষ্ট; এর চেয়ে বেশি প্রয়োগ করা অনাবশ্যক এবং ক্ষতিকর।

এর গুরুত্ব:

  1. ক্ষুদ্রমাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ:
    ওষুধ এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যে তার কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়, কিন্তু কোনো ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।
  2. শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতার উদ্দীপনা:
    অত্যন্ত ক্ষুদ্র মাত্রা শরীরের ভিতরে থাকা ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তিকে উদ্দীপিত করে, যাতে শরীর নিজেই রোগমুক্ত হতে পারে।
  3. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো:
    বেশি মাত্রার ওষুধ শরীরে অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই হোমিওপ্যাথিতে ওষুধের প্রয়োগ সর্বনিম্ন মাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

উদাহরণ:

যদি কোনো রোগের নিরাময়ের জন্য Belladonna ব্যবহৃত হয়, তবে হোমিওপ্যাথি সেই ওষুধের অত্যন্ত ক্ষুদ্রমাত্রা ব্যবহার করে, যাতে রোগী শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধ পায় এবং শরীর কোনো অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দ্বারা আক্রান্ত না হয়।

ড্রাগ প্রুভিং (Drug Proving) কী?

ড্রাগ প্রুভিং হোমিওপ্যাথির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি নতুন ওষুধের কার্যকারিতা এবং প্রভাব বোঝা যায়। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সুস্থ ব্যক্তির ওপর একটি নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ করা হলে তার শরীরে, মনে এবং আবেগে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

ড্রাগ প্রুভিং-এর মূল উদ্দেশ্য:

  1. ওষুধের লক্ষণ নির্ধারণ:
    ওষুধ সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে কী ধরনের লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে, তা শনাক্ত করা।
  2. সঠিক ওষুধ নির্বাচন:
    রোগীর লক্ষনের সঙ্গে ওষুধের প্রমাণিত লক্ষণ মিলে গেলে সেই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এটিই হল হোমিওপ্যাথির "ল' অফ সিমিলিয়া" নীতি।

ড্রাগ প্রুভিং-এর প্রক্রিয়া:

  1. সুস্থ ব্যক্তি নির্বাচন:
    পরীক্ষার জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিদের বেছে নেওয়া হয়।
  2. ওষুধ প্রয়োগ:
    নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ তাদের শরীরে প্রয়োগ করা হয়।
  3. পর্যবেক্ষণ:
    ওষুধ প্রয়োগের পরে শরীর ও মনে কী ধরনের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ এবং নথিভুক্ত করা হয়।
  4. লক্ষণ লিপিবদ্ধ করা:
    পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ওষুধের প্রভাবসমূহ বিশ্লেষণ করে বিস্তারিতভাবে নথিভুক্ত করা হয়। এটি পরে চিকিৎসার সময় রোগীর উপসর্গের সঙ্গে তুলনা করার জন্য কাজে লাগে।

উদাহরণ:

যদি একটি ওষুধ (যেমন Arsenicum Album) সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে খাবার পর বমি, দুর্বলতা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করে, তবে রোগীর মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসক সেই ওষুধ প্রয়োগ করবেন।

ড্রাগ প্রুভিং-এর মাধ্যমে ওষুধ এবং তার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ায় এটি হোমিওপ্যাথির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

ড্রাগ ডায়নামাইজেশন (Drug Dynamization) কী?

ড্রাগ ডায়নামাইজেশন হলো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া  এই পদ্ধতিতে ওষুধের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। একে পটেনটাইজেশন (Potentization) ও বলা হয়।

এই প্রক্রিয়ায় দুটি ধাপ:

  1. ডাইলিউশন (Dilution): ওষুধের কাঁচা উপাদানকে নির্দিষ্ট পরিমানে জলের সাথে বা এলকোহলের সাথে মিশিয়ে তার ঘনত্ব কমানো হয়।
  2. সাকশন (Succussion): প্রতিটি ডাইলিউশনের পর মিশ্রণটিকে বারবার ঝাঁকানো হয় বা আঘাত করা হয়, যাতে এর শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ড্রাগ ডায়নামাইজেশনের উদ্দেশ্য

  1. ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো।
  2. ওষুধের ভৌত শক্তিকে পরিবর্তন করে তার ভেতরের চিকিৎসাগত ক্ষমতা (ভাইব্রেশন বা শক্তি) সক্রিয় করা।
  3. রোগীর শরীরের ভাইটাল ফোর্সের সঙ্গে ওষুধের সূক্ষ্ম শক্তির সমন্বয় তৈরি করা।

ড্রাগ ডায়নামাইজেশনের গুরুত্ব

হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে যে কেবলমাত্র ওষুধের উপাদান নয়, তার অন্তর্নিহিত শক্তিই রোগ নিরাময় করে। ডায়নামাইজেশনের মাধ্যমে এই শক্তি সক্রিয় হয় এবং এমনকি খুব ক্ষুদ্র মাত্রার ওষুধও রোগ নিরাময়ে কার্যকর হয়ে ওঠে।

উদাহরণ:
যেমন, আর্সেনিকাম অ্যালবাম কাঁচা অবস্থায় একটি বিষাক্ত পদার্থ, কিন্তু ড্রাগ ডায়নামাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটিকে একটি কার্যকর এবং নিরাপদ ওষুধে রূপান্তরিত করা হয়।

এটি হোমিওপ্যাথির বৈজ্ঞানিক দিক এবং চিকিৎসা পদ্ধতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

 

Home               Check prices of medicines in Amazon 

Post a Comment

0 Comments